মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
হাটহাজারীতে পুলিশ-হেফাজত সংঘর্ষ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের ঘটনায় ২৬ মার্চ দুপুরে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে একইদিন দুপুরে হাটহাজারীতে মিছিল বের করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে হাটহাজারী থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। গুলি ছোড়ে পুলিশ। ঘটনার জেরে ভাংচুর করা হয় ভূমি অফিসেও। বিক্ষোভে হেফাজত নেতাকর্মীরা সরাসরি জড়িত থাকলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ভূমি অফিসে তাদের নেতাকর্মীরা ভাংচুর চালায়নি। পুলিশ-হেফাজত সংঘর্ষের ফায়দা নিতে হামলা করেছে বহিরাগতরা।
২৬ মার্চ দুপুর সোয়া দুইটার দিকে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার হেফাজতকর্মী মিছিল বের করে। তারা হাটহাজারী থানা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ডাক বাংলোতে হামলা চালায়। হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্যাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, উপজেলা ভূমি অফিস ও সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে এসিল্যান্ডের গাড়ি, সিসিটিভি ক্যামেরা, কম্পিউটার, টেবিল, চেয়ার, আলমারি, নথিপত্রসহ অনেক মূল্যবান রেকর্ড পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছে উপজেলা প্রশাসন। অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদকর্মী, দোকান মালিকসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৬ মার্চ দুপুরে হেফাজতের নেতাকর্মীরাই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের আগে মিছিলে হেফাজতের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে। তাদের দাবি, হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে অনেক বিএনপি, জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়েছে। এ ধরনের ঘটনায় তারাই ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে।
এ সম্পর্কে জানতে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদিকেও মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী থানা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও জামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদরাসার শিক্ষক মুফতি মাহমুদ হাসান ফয়জীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগেও অনেক কর্মসূচি পালন করেছি। তখন পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কখনও মাদ্রাসার ছাত্রদের গুলি করেনি। ২৬ মার্চ কেন গুলি করেছে, সেটি তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। ওই দিন আসলে কারা উসকানি দিয়েছে তদন্ত করে সেটা বের করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের কিছু সদস্য অতি উৎসাহী হয়ে গুলি করতে পারে। আবার অন্য পক্ষ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে উসকানি দিতে পারে।’
ভূমি অফিসে বহিরাগতরা ভাংচুর চালিয়েছে জানিয়ে মুফতি ফয়জী বলেন, ‘আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েই বলছি ভূমি অফিসে হামলার সঙ্গে বহিরাগতরা জড়িত। সরকার দলীয় লোকজন ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ভূমি অফিসে হামলার কিছু ডকুমেন্টস আমাদের কাছে আছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এরপর আপনাদের কাছে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হবে।’
হেফাজত নেতার অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলার চেয়ারম্যান এস এম রাশেদ বলেন, ‘ওই দিন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা হাটহাজারীতে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, সেখানে আওয়ামী লীগ বা সরকার দলীয় কারও পক্ষে যাওয়ার অবস্থা ছিল না। ওই দিন কারা ভূমি অফিসে হামলা চালিয়েছে তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্তে আসামিদের নাম বেরিয়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরও জড়িত। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এ জাতীয় ঘটনা কারা ঘটাবে? যারা স্বাধীনতা মেনে নেয়নি তারাই ঘটিয়েছে। তারাই হেফাজতের ওপর ভর করে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস করেছে।’
ঘটনার দিন মাঠে ছিলেন হাটহাজারী উপজেলা যুবলীগ নেতা এম এ রাসেল। তিনি বলেন, ‘হাটহাজারী একটি শান্তিপ্রিয় জনপদ। রাজনৈতিক ফায়দা নিতে একটি পক্ষ হেফাজতের মাধ্যমে হাটহাজারীকে উত্তপ্ত করে তুলছে। ঘটনার দিন আমরা মাঠে ছিলাম। আমরা দেখেছি, ওই দিন হেফাজত নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও ছিল। ছাত্র অধিকারের একাধিক কর্মীকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করতে দেখেছি।’
হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিএনপি। তাদের দাবি, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই এসব ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা সোহেল বলেন, ‘২৬ মার্চ হাটহাজারী মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তারা এখানে বিক্ষোভ করেছে। এর সঙ্গে বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
এ সম্পর্কে কথা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কোথাও যখন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয়, তখন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দলমতের লোক উপস্থিত হয়। হাটহাজারীর ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই। শুক্রবার সবাই পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে মসজিদে যায়। কে কোন দলের, কে কোন উদ্দেশ্যে এসেছে সেটা বুঝতে পারা কঠিন হয়ে পড়ে।’
কিছু বহিরাগত অবশ্যই ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো বিশ্লেষণ করছি। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ করছি।’ সূত্র:বাংলাট্রিবিউন।
ভয়েস/জেইউ।